[english_date]।[bangla_date]।[bangla_day]

কেশবপুরে সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ নদে ৫২ বছর ধরে রশি টেনে খেঁয়া পারাপার করে সংসার চালিয়ে আসছেন জগদীস দাস।

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

আজিজুর রহমান, কেশবপুর(যশোর):
কেশবপুরে সাগরদাঁড়ি কপোতাক্ষ নদে ৫২ বছর ধরে দড়া (রশি) টেনে নৌকায় খেঁয়া পারাপারের কাজ করে আসছেন জগদীস দাস। এ কাজ তাঁদের তিন পুরুষের। কপোতাক্ষ নদের চিংড়া-সারসা ঘাটে সকাল থেকে অধিক রাত পর্যন্ত দড়া (রশি) টেনে এলাকাবাসীকে নদ পারাপারে বৃদ্ধ বয়সেও তাকে সহযোগিতা করতে হচ্ছে ।
কেশবপুরের চিংড়া-সারসা খেঁয়া ঘাটে ১২ বছর বয়স থেকে ৫২ বছর এ ভাবেই কপোতাক্ষ নদে ৯০ দশকের আগে যে সময় খরস্রোতা বহমান ছিলো এই কপোতাক্ষ নদ সেই সময় থেকে প্রথমে হাল বেয়ে ও বর্তমানে দড়া (রশি) টেনে নৌকায় খেঁয়া পারাপার করেন জগদীস দাস (৬৫)। জন প্রতি পাঁচ টাকা করে নেওয়া হয় একবার পারাপারে, সাইকেলসহ দশ টাকা। বাবা হাজারী লাল দাসের হাত ধরেই তিনি হালবেয়ে নৌকায় মানুষ পারাপার করতে শেখেন।এখন আর হাল বেতে হয়না দড়া (রশি)টেনে মানুষকে পারাপার করেন তিনি। এতে তাঁর প্রতিদিন আয় হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কষ্টের মধ্যে সংসার চালাতে হয় তাঁর। নদ পারের সারসা গ্রামে তাঁর বসবাস। দীর্ঘ ১০০ বছর ধরে পূর্ব পুরুষরা এ কাজ করছেন।
তিন পুরুষের বৃদ্ধ জগদীস দাস (৬৫) খেঁয়া পরাপরের সময় বলেন, ‘প্রায় ৫২ বছর প্রথমে হাল ও পরে দড়া (রশি) টেনে নদে খেঁয়া পারাপারে এলাকাবাসীকে সহযোগিতা করলেও এখন আর সংসার চালানো কোন ভাবেই সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি জানান, এক সময়ের খরস্রোতা কপোতাক্ষ নদে এখন তেমন স্রোত নেই। তীব্র স্রোত বহমান সময়ে বাবা হাজারী লাল দাসের হাত ধরেই হাল বেয়ে ও বর্তমানে দড়া (রশি) টেনে খেঁয়া পারাপার করতে শেখেন। তখন যা আয় হতো তাতে সংসার চলেও কিছু সাশ্রয় করা যেত। এখন স্রোত নেই। খেয়া পারাপারে মানুষের যাতায়াতও কমে গেছে। সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দড়া (রশি) টেনে খোঁয়া পারের কাজ করেও ২০০ থেকে ২৫০ টাকার বেশি আয় হয় না। সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে নিত্যানন্দ দাস ও ছোট মেয়ে পূজা দাসকে লেখা-পড়া শেখানোর জন্য তাঁকে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। এ কাজ করে তিনি ২টি মেয়েকে বিবাহ দিয়েছেন। সংসারে তাঁর ছেলে চতুর্থ পুরুষ নিত্যানন্দ দাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য বিভাগ থেকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করেছেন। ছোট মেয়ে পূজা দাস সাগরদাঁড়ি আবু শারাফ সাদেক কারিগরি ও বাণিজ্য মহা বিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। জগদীস দাসের বসবাস কপোতাক্ষ পারের সারসা গ্রামে। তিনি ৫২ বছর খেঁয়া পারাপারে এলাকার মানুষকে সহযোগিতা করছেন। পারাপারে আয় রোজগার কমে যাওয়ায় সংসার চালাতে তাঁকে প্রতিনিয়ত কষ্ট স্বীকার করতে হচ্ছে। তাঁর দাবি প্রনোদনার মাধ্যমে সহযোগিতা করা হলে খেঁয়া পারাপারের কাজ করা সম্ভব হবে। আর তা না হলে হয়তো তাকে এ কাজ ছেড়ে দিতে হবে। ব্রীজ না থাকায় ঝুঁকি কমাতে নদীতে আড়াআড়িভাবে একটি দড়া (রশি) টানিয়ে এলাকার মানুষদের নৌকায় খেঁয়া পারাপার চলে।
ওই পরিবারের চতুর্থ পুরুষ নিত্যানন্দ দাস জানান, তাদের পূর্বপুরুষরা প্রায় ১০০ বছর ধরে এ কাজ করছেন। এখন তারা এ কাজ করতে চান না। তাই এ খেঁয়া ঘাট অধবা সাগরদাঁড়ি, চিংড়া, ধানদিয়া,জয়নাগর পাশাপাশি এই ৪ টি খেঁয়া ঘাটের যে কোন একটিতে ব্রীজ নির্মাণ হোক সেটাই তাদের দাবি। কারণ হিসেবে উল্লেখ করনে, এলাকার মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে এখানে ব্রীজ নির্মাণ করা এলাকার মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে সেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *